আজ বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মশিউর রহমান, বিপিএম-বার, পিপিএম-সেবা।
রাজধানীর বংশালে দিনে দুপুরে ব্যবসায়ীকে ধাক্কা মেরে ৬০ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত সর্দারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী খোকন দাস ওরফে বাইল্যা খোকন, মূল সংগঠক রেজাউল করিম এবং ভিকটিমের গতিবিধি রেকিকারী দলের কামাল হোসেন। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-লালবাগ) জানান, মা বুলিয়ান অ্যান্ড সিলভার জুয়েলার্সের কর্মচারি মহিউদ্দিন গত ২৬ এপ্রিল কদমতলীর খেজুরের গলিতে অবস্থিত মসলা এন্টারপ্রাইজের কাছাকাছি আরত থেকে ৭০ লক্ষ টাকা ব্যাগে নিয়ে তাঁতীবাজারের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে রওনা দেন। বিকেল অনুমান ৪টা ৫০টায় ইসলামপুরের নবনারায়ণ লেনের প্রবেশ মুখে পৌঁছামাত্র একজন দুষ্কৃতিকারী তাকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো অভিযোগ করে ধাক্কা দিলো কেন। টাকা বহনকারী মহিউদ্দিন “সরি” বলে ক্ষমা চেয়ে চলে যেতে চাইলে আশেপাশে ওঁত পেতে থাকা আরো ৭ থেকে ৮ জন দুষ্কৃতিকারী তাকে ধাক্কা দেয়ার অভিযোগ তুলে প্রচণ্ড কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে গুল লাগিয়ে দেয় এবং টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
তিনি জানান, জুয়েলার্সের মালিক আকিদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৭ এপ্রিল একটি ডাকাতি মামলা রুজু হয়। আশপাশের কয়েক শত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহ করে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের তদন্তে এই ডাকাতির পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের নাম, পরিচয় সনাক্ত হয়। আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গত ২৫ মে দিন ও রাতে ডিবি লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি টিমের নেতৃত্বে একাধিক টিম চট্টগ্রাম এবং খুলনায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুন্ঠিত টাকার মধ্যে নগদ সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য অতি সতর্ক এই ডাকাত চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে কোন মোবাইল ফোন উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর আগে এই ঘটনায় ডিএমপির কোতোয়ালী থানা পুলিশ বাবু এবং শাহ আলমকে গ্রেফতার করেছে।
তিনি আরো জানান, পুরাতন ঢাকার পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এই লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন করে থাকেন খুবই সাধারণভাবে। এই লেনদেনে থাকে আস্থা, বিশ্বাস এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। মোটা অংকের টাকা পরিবহনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও কাছাকাছি জায়গায় টাকা স্থানান্তর করা হয় বলে তারা অনেক সময় পুলিশকে অবগত করেন না বা সহযোগিতা নেন না।
তিনি জানান, পুরাতন ঢাকার এই এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বৈধ লেনদেনের পাশাপাশি অনেকেই হুন্ডির টাকা লেনদেন করে থাকেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ওঁৎপেতে থাকে এই হুন্ডির ব্যবসায়ীদের টাকা ডাকাতি করার জন্য। হুন্ডিতে টাকা লেনদেন করা আইনগত স্বীকৃত নয়। সে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ সময় বিষয়টি পুলিশ বা আদালতকে অবগত করে না। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ডাকাত বা ছিনতাইকারীরা অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। ডাকাতদের এই অপতৎপরতায় কখনো কখনো বৈধ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হন।
তিনি আরো জানান, এই ডাকাতির ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বাইল্যা খোকন। সে পুরাতন ঢাকায় বসবাস করে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থেকে কোন ব্যবসায়ী কীভাবে টাকা লেনদেন করে এই সম্পর্কে ভালো করে জানে। অপারেশনাল কমান্ডার রেজাউল করিম এক সময় পুরাতন ঢাকাতেই ব্যবসা করতো। খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর, মিরপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ডাকাতদেরকে ঢাকায় এনে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে কিলঘুষিতে রক্তাক্ত করে চোখে গুল লাগিয়ে ডাকাতি করে। তারা কম দামের বাটন ফোনে নিবন্ধনহীন সিম লাগিয়ে যোগাযোগ করে ঘটনার পরে মোবাইল এবং সিম নদীতে ফেলে দিয়ে বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে থাকে।
তিনি জানান, এই শহরে কেউ কারো খবর রাখে না বলে সরু রাস্তায় শত মানুষের সামনে ডাকাতি করে নিবির্ঘ্নে অর্ধ কিলোমিটার পথ দৌড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছে ডাকাতরা। ব্যবসায়ী ও সর্বসাধারণ মানুষ যদি তাদের প্রতিষ্ঠান বা বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভালো মানের সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে, ভিকটিমদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করে সবাই এগিয়ে আসে তাহলে এ জাতীয় ডাকাত বা ছিনতাইকারীদেরকে প্রতিরোধ অথবা গ্রেফতার করে আইন আমলে নিয়ে আসা সহজ হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী যদি হুন্ডি ব্যবসায়ীও হয় তাহলে যেনো চুপ না থেকে থানায় অভিযোগ করেন এবং ব্যবসায়ীসহ যে কেউ যদি মোটা অংকের টাকা পরিবহন করতে চান তাহলে নিকটস্থ থানা পুলিশের সহায়তা নেয়ার জন্য তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা রয়েছে। তাদেরকে পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।