মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের বাওইজানী এলাকায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে আরিফ শিকদার নামে এক সাবেক সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে । এ ঘটনার প্রতিকার পাওয়ার আশায় ও ন্যায় বিচারের দাবীতে দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগী মিনা আক্তার । বিষয়টি নিয়ে মহম্মদপুর থানা , মাগুরার বিজ্ঞ আদালত ও সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে অভিযোগ দ্বায়ের করেছেন মিনা আক্তার ।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহম্মদপুর উপজেলা সদরের বাঐজানী গ্রামের মো: কাউসার মিয়ার মেয়ে মিনা আক্তারের সহিত একই গ্রামের হারুন শিকদারের ছেলে সাবেক সেনা সদস্য আরিফ শিকদারের ৭ লক্ষ টাকা দেনমহরে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালের ১লা জুলাই বিবাহের পর থেকে বেশ ভালোই চলছিল দুজনের সংসার। সুখে স্বাচ্ছন্দে কেটেছে ৫ টি বছর। এরই মধ্যে মিনার গর্ভে একটি সন্তান ও আসে। বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় শশুর বাড়ি থেকে ধার বাবদ ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেন স্বামী আরিফ শিকদার যা মিনা আক্তার মামলায় উল্লেখ করেছেন। পরে কয়েকদফা ধারের টাকা আরিফ শিকদারের শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম ফেরৎ চাইলেও টাকা ফেরৎ দেয়নি আরিফ শিকদার । দেনা পরিশোধ পরিশোধ না করে আরিফ শিকদার তার ভাই তারেককে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তার স্ত্রীকে তার পিতার বাড়ি থেকে পুনরায় ২ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। মিনা আক্তার এতে বাদসেধে ”বলেন বিয়ের সময় তোমাকে আমার পরিবার থেকে কোন যৌতুক দেবার কথা ছিলনা”। এখন কেন আমি যৌতুক বাবদ টাকা এনে দিব? আর যৌতুক দেবার সমর্থ আমার পরিবারের না থাকায় টাকা দিতে রাজি হয়নি মিনা আক্তার। যৌতুকের টাকার বিষয়টি নিয়েই উভয়ের মাঝেই কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে শুরু হয় শাংসাড়িক অশান্তি । টাকা না পেয়ে স্ত্রী মিনা অক্তারকে বিভিন্ন সময়ে মানষিক ও শারিরিক নির্যাতন করেন তার স্বামী আরিফ শিকদার। লাঠি দিয়ে পিঠে,শরিরের একাধিক স্থানে আঘাত ও পেটে আঘাত করার এক পর্যায়ে রক্তক্ষরন হয়ে পেটের বাচ্চাটিও নষ্ট হয়ে যায় মর্মে জানান-মিনা আক্তার। একসময় স্ত্রীকে কৌশলে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কথা বলে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর করান এবং তালাক নামায় স্বাক্ষর করাতে চান তার সু-চতুর স্বামী । তালাক নামার কাগজটি চিনতে পেরে মিনা আক্তার সেটিতে স্বাক্ষর করেনি। তালাকনামায় স্বাক্ষর না করার কারনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদান করেন তার স্বামী । বিষয়টি ওই সময়ে মহম্মদপুর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন মিনা আক্তার। ডায়েরী নম্বর ৩৬৯ তারিখ ৮-৮-২০২২ইং । এর পরেও সবকিছু মানিয়ে নেবার চেষ্টা করেন মিনা আক্তার । স্বামীর নানাবিধ অত্যাচার সইতে না পেরে স্বামীর বাড়ি থেকে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন মিনা আক্তার। নারী নির্যাতনের বিষয়ে মহম্মদপুর থানায়, মাগুরা আদালতে ও সেনাবাহিনীতে অভিযোগ করেন মিনা আক্তার। এক পর্যায়ে মিনার আর কোন খোজ খবর না নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় স্বামী আরিফ শিকদার । মিনা আক্তার ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় নিজেই বাদী হয়ে মাগুরার বিজ্ঞ আদালতে স্বামী আরিফ শিকদার, দেবর তারেক শিকদার ও শাশুড়ি জরিনা বেগমকে আসামী করে যৌতুক নিরোধ আইনের আওতায় একটি মামলা করেন। মামলাটি আদালতে এখনও বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। এদিকে মিনা আক্তারের মা মোসা: আনোয়ারা বেগম তার নিকট থেকে নেওয়া ধারের ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য নিজেই বাদী হয়ে মাগুরার বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দ: বি: অইনের ৪০৬/৪২০/৫০৬ (২) ধারা মতে ১০/০৮-২০২৫ ইং তারিখে একটি মামলা দায়ের করেছেন । মামলাটি বিজ্ঞ আদালত মহম্মদপুর থানাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। মামলা’টি তদন্ততাধীন আছেন।
ভূক্তভোগী মিনা আক্তার আরো বলেন, সরকারী চাকুরী দেখে মায়ের ইচ্ছা মতেই আমি আরিফ শিকদারের সাথে বিয়েতে রাজি হই । বিয়ের পর থেকেই সংসার টেকানোর জন্য অনেক শারিরিক ও মানষিক অত্যাচার সহ্য করে মুখ বুজে ছিলাম। এত ঘটনার পরেও সংসার করার ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও স্বামীর খোজ খবর নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছি। স্বামী প্রায় ৩ বছর হলো আমার কোন খোজ খবরই নেয়না। আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ নেই আমার স্বামীর।তার যদি সংসার করার ইচ্ছা না থাকে তাহলে শরিয়ত ও বিধি সম্মতভাবে আইনানুসারে আমাকে ছেড়ে দিতে পারে। তার কোন কিছুই করছেনা।এদিকে বাবার বাড়ীতে আমি অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছি।
অভিযুক্ত সাবেক সেনাসদস্যের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি । তবে তার বাড়িতে পরিবারের লোকজন জানায় এ বিষয়ে ও নানাবিধ অভিযোগের কারনে আরিফ এখন সেনাবাহিনী থেকে চাকুরীচ্যুত হয়েছেন।
মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহমান বলেন,বিজ্ঞ আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমানে আদালতের একটি মামলার নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণ সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।