নরসিংদীতে ব্ল্যাকমেইল,টর্চারসেল ও মধুচক্রের ফাঁদ পেতে শতাধিক মানুষকে সর্বস্বান্ত করার পর অবশেষে পুলিশের ফাঁদে পা দিয়েছেন অভিনব এই প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলকারী চক্রের ৪ সদস্য।
বুধবার(৪ ডিসেম্বর)ভোরে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম এর নেতৃত্বে নরসিংদী পৌর শহরের চিনিশপুর এলাকার এক আবাসিক ভবনে অবস্থিত চক্রটির আস্তানা ও টর্চার সেল ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করেন নরসিংদী জেলা পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মধু চক্রের কয়েক সদস্য দ্রুত সরে পড়তে সক্ষম হলেও চক্র-প্রধান মো.ইয়াসিন,সেকেন্ড ইন কমান্ড ও আস্তানার ভাড়া গ্রহীতা শারমিনসহ মধু চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং টর্চার সেলের বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় তাদের হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয় ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে উপার্জিত নগদ ৫ হাজার টাকা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নরসিংদী জেলার শিবপুর থানাধীন আইয়ূবপুর ইউনিয়ন হিজুলিয়া এলাকার বাসিন্দা এক মাদ্রাসা ছাত্র ও কোরআনে হাফেজ চক্রটির শিকারে পরিণত হলে,তিনি এর প্রতিকার চেয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হন। তাকে গোপন আস্তানায় নিয়ে নির্যাতনের পর উলঙ্গ করে অশ্লীল ছবি তুলে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তিনি পকেটে থাকা নগদ ৫ হাজার টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন নরসিংদী সদর উপজেলাধীন টাওয়াদী এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমানের পুত্র ইয়াসিন (৩০),তার স্ত্রী আফসানা (২৫) একই উপজেলার গাবতলি এলাকার রতনের স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০) এবং শিবপুর থানাধীন খৈশাখালী এলাকার বাসিন্দা জনৈক নুরুল ইসলামের কন্যা রেজিয়া আক্তার বৃষ্টি (২৮)। চক্রটির হাতে বিগত কয়েক বছরে শতাধিক ব্যক্তি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন মর্মে অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্র মারফত জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে অভিযানে নেতৃত্বের থাকা নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন,ভুক্তভোগী মাদ্রাসা ছাত্রের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান স্যারের নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে আমরা কোনোরকম সময় নষ্ট না করে এবং অতি সঙ্গোপনে চক্রটির প্রধান কার্যালয় এবং নির্যাতন কেন্দ্রে অভিযান পরিচালনা করি। তিনি আরও বলেন,এই চক্রগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়ে প্রধানত বিত্তবান এবং গ্রামের সহজসরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতো । তাদেরকে নির্মূলে কার্যক্রম চলমান থাকবে। এছাড়া কোনো প্রলোভনেই অপরিচিত ব্যক্তির বাড়িতে না যেতে এবং পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেও অনুরোধ জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী মাদ্রাসাছাত্র কর্তৃক নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়েরের পর তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।