ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার খাটরা মুন্সি বাড়ি বাইতুন নূর জামে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম এবং নাল জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে এবং এলাকাবাসীসহ ভূক্তভোগীরা এখন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছেন।
দুই যুগ ধরে ‘নাল’ জমি নিয়ে নাটক-
প্রায় ২০ বছর ধরে একটি ‘নাল’ জমিকে কবরস্থান বানানোর চেষ্টা চললেও, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে অসংগতি ও অনিয়ম থাকায় এখন পর্যন্ত জমির নামজারি তারা সম্পন্ন করতে পারেন নাই।
আর জমি কেন্দ্রিক ঘটনার মধ্যেই যে আর্থিক অনিয়মের এক অন্ধকার অধ্যায় লুকোনো তা সেটাও সকলের সামনে চলে আসে।
কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন-
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক আমেরিকা প্রবাসী ও এলজিআরডি’র একজন সরকারি কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সরকারি কোনো টেন্ডার ছাড়াই কোটি টাকার মাটি ভরাট ও প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।প্রশ্ন উঠেছে, সাধারণ মানুষের মালিকানাধীন জমিতে কিভাবে এলজিআরডি টাকা বরাদ্দ করলো? মসজিদ কমিটির নামে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পেছনে কাদের ইন্ধন রয়েছে—তা স্পষ্ট তদন্তের দাবি রাখে।আদৌও খাটরা মুন্সি বাড়ি বাইতুন নূর জামে মসজিদের নামে কোন ট্রেন্ডার বা সরকারি টাকা বরাদ্দ হেয়েছে কিনা?
সভাপতি বলছেন, তিনি কিছুই জানেন না-
মসজিদ কমিটির সভাপতি আহমদ মিয়া বলেন,আমি টেন্ডার-ফেন্ডার বুঝি না। ইংরেজি লেখা কাগজ আমার বুঝে আসে না। ফান্ড এসেছে, এটুকুই জানি। সব কিছু একা দেখাশোনা করেছেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদ মিয়া।তবে এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীদের দাবি, প্রকল্প বাস্তবায়নে সভাপতির সক্রিয় ভূমিকা ছিল এবং কাজের প্রতিটি ধাপে তিনি ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা জড়িত ছিলেন।তবে জটিলতা প্রকট আকার ধারন করলে, সবাই যে একা মাসুদ মিয়ার উপরে দায় চাপিয়ে সরে যাবে এটা সহজেই অনুমেয়।কেউই সম্মিলিত দায় চায় না।
ভূক্তভোগীর অভিযোগ: “আমাদের ৮.৮ শতাংশ জমি ফেরত চাই”
ভূক্তভোগী পরিবারের প্রতিনিধি ফয়সাল রাজু জানান,আমাদের ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ৮.৮ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করে এলজিআরডির সরকারি অর্থে মাটি ফেলা ও প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।যা আইনত অপরাধ। আর আমরা শুধু আমাদের অংশটাই ফেরত চাইছি।
তিনি আরও বলেন,
মসজিদ কমিটি কথায় এক, কাজে আরেক। মুখে সমাধানের কথা বললেও তারা বারবার সময় ক্ষেপণ করে আমাদের দাবিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন।”
গ্রামবাসীকে ঢাল বানানোর অভিযোগ-
ভূক্তভোগীদের দাবি, মসজিদ কমিটির সভাপতি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামবাসীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন।যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। জমি আমাদের, কাগজ আমাদের,আলোচনা হবেও আমাদের সাথে।এখানে গ্রামবাসির আবেগকে ব্যবহার করে অবৈধ কাজকে জায়েজ করা যাবে না।যা হীনমন্যতার পরিচয়।
এলজিআরডি’র ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে-
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—সরকারি কোনো টেন্ডার ছাড়াই কীভাবে এলজিআরডির বরাদ্দ থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলো?
কারা এই বরাদ্দে ভূমিকা রেখেছে এবং প্রকল্পের মূল উপকারভোগী কারা—তা প্রকাশ হওয়া জরুরী প্রয়োজন।
আইনি পথেই সমাধান – ভূক্তভোগী পরিবার- ভূক্তভোগী পরিবার জানিয়েছে, মসজিদ কমিটির সঙ্গে আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই। এখন একমাত্র সমাধান আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।
তারা বলেন,প্রভাবশালী কারো চাপ, হুমকি বা সময় ক্ষেপণ আমাদের দাবিকে থামাতে পারবে না। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়বো।
সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ:ফয়সাল রাজু বলেন,সম্ভবত এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোন উদঘাটিত মসজিদ কমিটির আর্থিক অনিয়ম নির্ভর দুর্নীতির ঘটনা হতে পারে। সাংবাদিক ভাইদের বলবো, আপনারা দয়া করে এই ঘটনাটি আরও বেশি করে তুলে ধরুন। সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রকৃত সত্য যেন সামনে আসে।