
নরসিংদীতে ইউএনও অফিসে ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও প্রকাশের পর থেকে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশ সাংবাদিক পেশাদার ফোরাম ও মনোহরদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি, তরুণ সাংবাদিক কাজী শরিফুল ইসলাম শাকিল।
দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার এই সাংবাদিক এখন নিজেই হয়েছেন নানা মিথ্যা অভিযোগ ও মানহানিকর প্রচারণার লক্ষ্যবস্তু।
সম্প্রতি শাকিল স্থানীয় ইউএনও অফিসের প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যা দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিস (ইউএনও) কার্যালয়ে কথিতভাবে ঘুষের লেনদেনের দৃশ্য দেখা যায় বলে স্থানীয়দের দাবি। এই ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে তোলপাড় শুরু হয়।
শাকিল জানান, “আমি সাংবাদিকতা করি জনগণের অধিকার ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু ঘুষ ও দুর্নীতির ভিডিও প্রকাশের পর থেকে একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি আমাকে হয়রানি করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “সত্যের পথে থেকে জনগণের পক্ষে কথা বলার অপরাধেই আজ আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।”
স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ বলছে, কাজী শরিফুল ইসলাম শাকিল একজন নীতিবান ও পেশাদার সাংবাদিক, যিনি বরাবরই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হয়রানির ঘটনায় তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মনোহরদী উপজেলা প্রেসক্লাবের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, শাকিলের মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অপপ্রচার সংবাদপেশার স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।
বাংলাদেশ সাংবাদিক পেশাদার ফোরামের নরসিংদী জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিকদের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনের কারণে কোনো সাংবাদিক যদি হয়রানির শিকার হন, তবে তা শুধু একজন ব্যক্তির নয়— সমগ্র গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত।” সংগঠনটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিতকরণ এবং সাংবাদিক শাকিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে, স্থানীয় সাধারণ মানুষও শাকিলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করতে গিয়ে শাকিল এখন প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। “যে সাংবাদিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরে, তাকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব,”— মন্তব্য করেছেন মনোহরদীর কয়েকজন স্থানীয় সচেতন নাগরিক।
নরসিংদী জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় অভ্যন্তরীণভাবে অনুসন্ধান চলছে।
সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকা সাংবাদিক শাকিলের এই ঘটনাকে ঘিরে এখন জেলাজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, “একজন সাহসী সাংবাদিককে চুপ করিয়ে দেওয়া নয়, বরং তার তথ্যের সত্যতা যাচাই করাই হওয়া উচিত প্রশাসনের প্রধান কাজ।”
সত্য প্রকাশে অবিচল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অটল — এমন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই গণতান্ত্রিক সমাজের দায়িত্ব। সাংবাদিক শাকিলের ঘটনাটি তাই শুধু একটি ব্যক্তিগত লড়াই নয়, এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষারও প্রতীক হয়ে উঠেছে।