মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ভাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানোর মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির একাধিক ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিভাবকরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এই ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এবং অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা উল্লেখ করেছে, "বহুদিন যাবত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ কর্তৃক জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন ও ভয়ভীতির শিকার হয়ে আসছি। এ অবস্থায় আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম হতাশাগ্রস্ত।" তারা অবিলম্বে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীদের মুখের বক্তব্য আরও ভয়াবহ। তারা জানায়, প্রধান শিক্ষক স্কুলের দোতলায় একটি রুমে মাঝেমধ্যেই পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীদের ডেকে নিতেন। সেখানে তাদের সাথে অশালীন ব্যবহার করতেন এবং "জোরপূর্বক" প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত তাদের আটকে রাখতেন।
অভিযোগকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে রয়েছে: পঞ্চম শ্রেণির রুহান, আবু হুরায়রা, আসলাম আলিফা, শায়লা মাহিয়া, লামিয়া, বৈশাখী, আম্বিয়া, ইতি, মোস্তাকিম, নাহিদ, সাইরা এবং সামিরা।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিভাবকরাও একই ধরনের অভিযোগ এনেছেন। হেলেনা খাতুন, বেবি, কাজল, শাহিনা, রিক্তা, কনিকা, জাহানারা, সাজেদা, বিথী খাতুন, লায়লা খাতুন, রহিমা, শফিকুল এবং মোহাম্মদ রবিউলসহ বহু অভিভাবক তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় চরম চাঞ্চল্যতার সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ অভিভাবকই তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকে এতটাই আতঙ্কিত যে, তারা বলেছেন, "অন্যত্র কোনো স্কুলে ভর্তি করাবো, তবুও এ স্কুলে আর মেয়েকে পড়াবো না।"
এলাকার ইউপি সদস্য কাইমুল ইসলাম এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয়টি আমি শুনেছি, এ বিষয়ে এলাকায় চাঁপা খোভ বিরাজ করছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছি।
এই জঘন্য ঘটনায় এলাকার সচেতন মহল অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও জোরালো দাবি উঠেছে। তারা অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এলাকার এক সাবেক সেনা সদস্য এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকের এমন আচরণ সমাজের জন্য চরম লজজার তাই তদন্তপূর্বক শাস্তি নিশ্চিত এর জোর দাবি জানাচ্ছি।
অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক মো: মোস্তাক আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "আমি মাঝেমধ্যে ছাত্রীদের আদর করি ঠিকই, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযোগ উঠেছে, ওভাবে না।"
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বর্তমানে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে শাসিয়ে ও ভয় দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।
আরও জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের ছেলে আসিফ-এর বিরুদ্ধেও ইতিপূর্বে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের রুম বন্ধ করে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছিল।
এ বিষয়ে প্রাথমিক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি বিষয়টি, কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এ খবর পেয়ে মহম্মদপুর থানার ওসি আব্দুর রহমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এসআই স্বপন সহ একটি পুলিশ টিম পাঠান।