শরীয়তপুরে মা-ইলিশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে নৌ-পুলিশ। তারা জিরো টলারেন্স নীতিতে নদীতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা টহলের পাশাপাশি চালানো হচ্ছে প্রচারণা। কারণ, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষা পেলে সহজলভ্য হবে এবং স্বল্পমূল্যে ক্রয় করা যাবে।
সরেজমিন গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে
জানাগেছে, এ বছর ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় সব রকম মৎস্য নৌযান কর্তৃক ইলিশসহ সব প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। শরীয়তপুর জেলার জাজিরা-নড়িয়া-ভেদরগঞ্জ উপজেলা অংশে ২০ কিলোমিটার এলাকায় এবার মা-ইলিশ নিধন বন্ধে অনান্য বছরের চেয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নৌ-পুলিশ। মাঝিরঘাট নৌ ফাঁড়ি, নরসিংহপুর নৌ ফাঁড়ি ও সুরেশ্বর নৌ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, মা-নিধন নিধন বন্ধে শরীয়তপুরের তিনটি নৌ-ফাঁড়ি অর্থাৎ মাঝিরঘাট নৌ ফাঁড়ি, নরসিংহপুর নৌ ফাঁড়ি ও সুরেশ্বর নৌ ফাঁড়ি অনান্য বারের চেয়ে বেশি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মাঝিরঘাট নৌ-ফাঁড়ির আইসি (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সৈয়দ মোশারফ হোসেন, নরসিংহপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. ইয়াছিনুল হক এবং সুরেশ্বর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আব্দুল জলিলের পৃথক পৃথক নেতৃত্বে শরীয়তপুরের ২০ কিলোমিটার মা-ইলিশের প্রজননের অভয়ারণ্য নিশ্চিতে কাজ করে চলছে। এতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, মৎস বিভাগ ও কোস্ট গার্ড সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিনটি নৌ-ফাঁড়িতে অন্তত ১৩ টি মামলায় ২৮ জন আসামীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়ছে। অভিযানে অন্তত ১৭ টি মাছ ধরার ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। এবার আগের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি সচেতন। তাই সরকারের নির্দেশ অমান্য করে মা ইলিশ ধরার জন্য চেষ্টা করে সফল হতে পারে নি অসাধু ব্যবসায়ী৷ নৌ-পুলিশ স্থানীয় প্রশাসন ও কোস্ট গার্ডের সহযোগিতা নিয়ে সদা তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে ড্রোনের মাধ্যমে নদীতে মনিটরিং করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এবার মা-ইলিশ রক্ষার পাবার ফলে ইলিশ সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি মানুষ স্বল্পমূল্যে ইলিশ খেতে পারবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় অনেকেই বলেন, এ অনান্য বারের চেয়ে নৌ-পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আমরা নদীর মানুষ। কঠোর ভূমিকার কারণে আগামী আমরা স্বল্পমূল্যে ইলিশ খেতে পারবো।
মাঝিরঘাট নৌ-ফাঁড়ির আইসি (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সৈয়দ মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা (নৌ-পুলিশ) মা-ইলিশ রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। প্রজনন মৌসুমের আগে থেকেই আমরা জেলেদের নানাভাবে সচেতন করেছি। নিয়মিত মনিটরিংয়ের কারণে এবার গতবারের চেয়ে আমরা বেশি সফলতা অর্জন করেছি। তবে কিছু অসাধু জেলে নদীতে মাছ ধরার চেষ্টা করায় আমরা আটক করেছি এবং ট্রলার জব্দ করেছি। আমরা ইলিশ সম্পদ রক্ষা কোনো প্রকার ছাড় দিচ্ছি না।
নরসিংহপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, আমরা কোনও জেলেদের গ্রেপ্তার বা তাদের জাল-নৌকা জব্দ করতে চাই না। তবে কেউ মা ইলিশ নিধনের চেষ্টা করলে আমরা দেশের স্বার্থে, জেলেদের স্বার্থে নদীর সম্পদ বৃদ্ধি করতে সরকারি বিধিনিষেধ কার্যকর করার উদ্যোগ নিচ্ছি। মা ইলিশের এখন প্রজনন মৌসুম। এখন মা ইলিশ না ধরলে জেলেদেরই উপকার হবে।
সুরেশ্বর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আব্দুল জলিল বলেন, আমরা দেশের সম্পদ রক্ষায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এতে সকলে আমাদের সহযোগিতা করছেন। আর আমরা দেশের সম্পদ রক্ষায় আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবো।
এ ব্যাপারে নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা মা ইলিশ নিধন বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি। জাতীয় স্বার্থে আমরা কাজ করছি। আর ২৫ অক্টোবরের পরেই জেলেরা নদী মাছ ধরতে পারবে।