ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের খাটরা মুন্সি বাড়ি বাইতুন নূর জামে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে একটি নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।নোটিশ পাওয়া স্বত্বেও অভিযুক্তরা অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ অব্যাহত রেখেছে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নোটিশদাতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে ।তারা ভয়ংকর রকম কিছু করার ছক কষছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
নোটিশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, খাটরা গ্রামে অবস্থিত পারিবারিক কবরস্থানটি অন্য কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন নয়। এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬ এবং ওয়াকফ অর্ডিন্যান্স ১৯৬২-এর আওতায় পড়ে, যা সরকারি তত্ত্বাবধানের অধীন ও তদারকিতে পরিচালিত হওয়ার কথা।অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্ত মসজিদ কমিটির সদস্যরা আইনগত অধিকার না থাকা সত্ত্বেও কবরস্থানের উন্নয়নের নামে সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে,খাটরা গ্রাম পশ্চিম পাড়া কবরস্থান প্রকল্পটির টেন্ডার নং: GSID-2/FRD/SDW-119 এর সম্পূর্ণ টাকার কে বা কারা উঠিয়ে নিয়েছেন তা অবশ্যই তদন্তের দাবী রাখে।খাটরা মুন্সি বাড়ি বাইতুন নূর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আহমদ মিয়া নোটিশ পাওয়ার পর পদত্যাগ করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।কারন বিগত পঁচিশ বছরের দানের আয় ও ব্যয়ের পরিপূর্ণ হিসাব না দিয়ে তিনি বা তার কমিটির কোন সদস্য কোন ভাবেই পদত্যাগ করতে পারবেন না।যেখানে পারিবারিক কবরস্হানে সরকারি বরাদ্দ নিয়ে তা আত্মসাৎ হতে পারে সেখানে বিগত পঁচিশ বছর তারা মসজিদ ও কবরস্হানের নামে কতটা টাকা তুলেছেন তা নিয়েও গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে অনেক অনেক বড় প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে।
নোটিশে একটি গুরুতর অভিযোগও উত্থাপন করা হয় — মসজিদ কমিটির সভাপতি আহমদ মিয়ার ছেলে দুবাই থেকে ফোনে হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছেন।এছাড়াও, প্রভাবশালী স্থানীয় এক মাতব্বর নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মিমাংসা করে দেওয়ার উদ্দেশ্য লোক মারফত মোটা অংকের টাকা দাবী করেন,যার ফলে গ্রামীণ পর্যায়ে সমস্যাটির মীমাংসা ব্যাহত হয়।জনশ্রুতি আছে,ঐ মাতুব্বরের মাধ্যমে অভিযুক্ত ফিরোজ মিয়া গং বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে তার সৎ মা নাসরিন বেগমকে বসত ভিটা ছাড়া করতে সক্ষম হয়েছেন।নাসরিন বেগম তার অংশের ন্যায্য হিস্যার টাকা আইনত না পেলেও দলিল করে বসত ভিটা রেখে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র থেকে জানা যায় ।এই নাসরিন বেগমই একসময় ফিরোজ মিয়া গংদের মানসিক অত্যাচারের অতিষ্ঠ হয়ে ভাংগা সদর থানার দারস্থ হয়েছিলেন ।অনুসন্ধানের সুবিধার্থে আমরা ঐ স্হানীয় মাতুব্বরের নাম প্রকাশ থেকে বিরত থাকছি।
গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন,ঐ স্হানীয় প্রভাবশালী মাতুব্বর এর আর্থিক ও বিপুল সম্পদের উৎস কি ? গ্রামে তার রাজকীয় বাড়ী তৈরির টাকা তিনি কোথায় পেলেন ? তবে কি নিক্সন চৌধুরীর সহযোগিতায় তিনি অঢেল বিত্ত বৈভব গড়ে তুলেছেন ? গ্রামে তার বিষয়ে নানা মুখি আলোচনা থাকলেও রাতে তিনি গ্রামের বাইরে রাত্রি যাপন করেন বলে আমরা জানতে পেরেছি ।এই বিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমেই তদন্ত হলে অনেক কিছু বের হয়ে আসবে বলে বোদ্ধা মহল মনে করেন।
ভুক্তভোগী ও নোটিশ দাতা পরিবারের সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা নোটিশকে পরোয়া করছে না।তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে প্রাশসনকে বৃধ্বাংঙুলি দেখাচ্ছে।
তাদের ঔদ্ধত্য এতোটাই বেড়েছে যে ,গত শনিবার মুন্সি বাড়ি বাইতুন নূর জামে মসজিদ এর সভাপতি আহমদ মিয়া নোটিশ দাতার মায়ের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ভীতি প্রদর্শনের লক্ষ্যে রাত এগারোটায় একাধিকবার ফোন করেন যা তার পরিবারকে ভীত ও আতংকিত করে তোলে।
সূত্র নিশ্চিত হয়েছে,এই ভীতি প্রদর্শনের পূর্বে বাচ্চু ও সেলিম গং এর নির্দেশে আহমদ- মাসুদ গং নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঐ প্রভাবশালী মাতুব্বরের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা শেষে ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ০১৭৯৫১২০১৪৩ নাম্বার থেকে বারংবার ফোন কল করতে থাকে।নোটিশ দাতা জানান আমাদের পরিবারের মহিলা সদস্য আমার মায়ের মুঠোফোনে ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বারংবার ফোন কল করা অত্যন্ত জঘন্য ঘৃনিত নিন্দনীয় এবং ক্ষমার অযোগ্য। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।তার উপর নোটিশ দাতার মা বয়স্ক একজন।তিনি আরও জানান, মোবাইল কল রেকর্ড ও প্রমাণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে ঐ মাতুব্বর সহ বাচ্চু -সেলিম- আহমেদ – মাসুদ গংদের নামে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।তাছাড়াও বিষয়টি লিখিতভাবে প্রশাসনে জানানো হবে বলে তিনি জানান।
গ্রামবাসীর মতে, অভিযুক্তরা শুধু দুর্নীতিগ্রস্তই নন, তারা নৈতিকভাবে দেউলিয়া। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়ায় এ ধরণের ক্ষমতার অপব্যবহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিদ্রুত তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হচ্ছে।তা না হলে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় প্রশাসন এড়াতে পারবে না।