সন্ত্রাসী হারুন মুন্সি মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের মোঃ রজন মুন্সির ছেলে। তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠেছে।
গত মঙ্গলবার (১লা জুলাই) মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসে তার ভাই শাহিন মুন্সি সহ শ্যামনগর গ্রামের কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ঢুকে খারাপ ব্যবহার সহ অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
একপর্যায়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদেরকে আটক করে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিল্টন এসে সমঝোতার মাধ্যমে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার বলেন, সন্ত্রাসী হারুনের নয় মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় তার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তারপর সে অফিসে এসে উত্তেজিত হয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে একপর্যায়ে কর্মচারীর গায়ে হাতও উঠায়। তখন অফিসের লোকজন দরজা বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে শ্যামনগর গ্রামের অনেক লোকজন অফিসের নিচে জমায়েত হয়।
তারপর বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মি.মিল্টন অফিসে আসে এবং হারুনের সকল বকেয়া বিল পরিশোধ করে ও আমাদের ডিজিএম স্যারের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে অফিস থেকে বের হয়। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে তিনি অভিহিত করেন। সাথে সাথে হারুনের পক্ষ হয়ে মিল্টন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় ভবিষ্যতে যেন এমন কাজ আর না করে বলে তাকে সাথে নিয়ে যায়। যার কারণে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুক ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
এলাকার সাধারণ লোকজনও হারুনের এ বিষয়টা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং আরও বলেন যে সে প্রতিনিয়ত প্রায়ই এ ধরনের কাজ করছে যা আমাদের এলাকার সুনাম নষ্ট করছে। এছাড়াও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায় এই সন্ত্রাসী হারুন তত আওয়ামী লীগের আমলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উজ্জলের নেতৃত্বে চলতে বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টানোর পরে এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কের নির্দেশে চলে।
ছাড়াও এলাকাবাসী তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আরো বিস্তারিত কিছু তুলে ধরেন।
গত কোরবানি ঈদের আগের দিন শুক্রবার (৬জুন) ঢাকা থেকে ঈদ করতে আসা মোহাম্মদপুরের সন্তান মি. বাবুল যিনি একটি বিশ্ব বিখ্যাত একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন। তিনি ঈদ করতে বাড়িতে আসলে হারুনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শিকার হন। হারুন এলাকার মধ্যে কিছু লোকজন নিয়ে একটি সন্ত্রাসী দল তৈরি করেছে, আর তার নেতৃত্ব দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মিল্টনের ছোট ভাই ইউসুফ।
তাকে লাঞ্ছিত করে ওর টাকা পয়সা ছিনতাই করতে চেয়েছিল সে ও তার দলবল।কিন্তু তাদের বেগতিক অবস্থা দেখে অবশেষে দৌড় দিয়ে বাবুল জীবন রক্ষা করে। এ প্রসঙ্গে বাবুল বলেন ইউসুফ এর নেতৃত্বে হারুনসহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী একটি দল আমার উপর হামলা চালায় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে হারুন চেয়ার দিয়ে আমাকে মারতে আসে। আমি কোন উপায় না পেয়ে দোড় দিয়ে পালিয়ে যায়।
তা না হলে আমার সর্বোচ্চ লুট করে ও আমাকে প্রাণে মেরে ফেলত। যাহার সাক্ষী এলাকার অনেক লোকজন যারা সবাই প্রত্যক্ষদর্শী। আমি ঢাকায় থাকি বলে তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা করতে পারেনি।
আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য সরোজমিনে গিয়ে ঘটনা সত্যতা পায়। এছাড়াও আরেকজন ভুক্তভোগী যার নাম জেসমিন আরা খাতুন। তাহার বাবার সম্পত্তির উপর হারুনের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ইউসুফ ও মিল্টনের নেতৃত্বে জোরপূর্বক জমি দখল করে ঘর উঠায়। জেসমিন বলেন আমার বাবার সম্পত্তি আমাদের চার বোনকে দিয়েছে। তার পাশে ১০ শতক জমি মজিবুর নামে এক ব্যক্তির নিকট আমার আব্বা কয়েক বছর আগে বিক্রি করেন। গত তিন/ চার বছর আগে আমার বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে তার জমি বুঝিয়ে দেয় এবং আমরা সেই মোতাবেক গ্রামের গণ্য মান্য ব্যক্তিদের নিয়েজমির সীমানা প্রাচীর তৈরি করি। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে তারা আমাদের প্রাচীর ভেঙ্গে আমাদের জায়গায় টিনের ঘর তৈরি করে। তিনি আরো জানান ঘর উঠানোর কারণে আমরা থানায় সাহায্য প্রার্থনা করি কিন্তু থানা উক্ত ঘটনার জমি জমা নিয়ে আমাদের মামলা বা অভিযোগ নেই না। তখন আমরা বোনেরা মিলে পরামর্শ করে আদালতে কেস করি। কিন্তু আদালতের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আমাদের জমি দখল করে এবং টিনের ঘর উঠায় । অথচ মিল্টনের বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় ১০শতক জমি তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া হয় এবং আমরা আমাদের জমির মধ্যে সীমানাপ্রাচীর স্থাপন করি যেটা এলাকা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সবাই জানে।
তিনি আরও বলেন আমরা উক্ত ঘটনার মামলাটি কোর্টে করেছি। কোর্ট তাদের মাধ্যমে উক্ত জমাজমির মামলাটি নিস্পত্তি করতে বলে কিন্তু তারা কোর্ট অমান্য করে টিনশেড ঘর তোলে যা সন্ত্রাসীর বহিঃপ্রকাশ। না বললেই নয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য মিল্টনের ছোট ভাই ইউসুফকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করে। আর এখন মিলটন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক, এখন তার ছত্রছায়ায় হারুন সহ ৩০-৩৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল রয়েছে যাদের কাজ এলাকার নিরীহ লোকজনের জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো। আমরা ও আমার পরিবার সবসময় আতঙ্কে থাকি যে কখন আমাদের উপর আক্রমণ চালাবে।
কানা জুয়েল নামে নাকি আরেকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছে সে নাকি অত্যন্ত ভয়ংকর আমরা এর প্রতিকার চাই সবার কাছে।
এছাড়াও এই সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে ইউসুফ ও মিলটনের নেতৃত্বে আরো কয়েক জনের জমি দখল করে বাউন্ডারি দিয়ে রাখছে। আমরা আরও জানতে পারি তাদের ভয়ে এলাকার লোকজন মুখ খোলে না এবং নাম বলতে চায় না। শুধু একটাই কথা বলে, তারা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। আমরা কার কাছে দোষ দেব, বিচার দেব কারণ পুলিশ প্রশাসনকে তো তারা মানে না এমনকি তাদের কথা না শুনলে পুলিশের উপরও আক্রমণ চালায়। এই ভয়ে আমরা মুখ বন্ধ করে রাখি। তবে তাদেরকে তাদের কর্মকান্ডের জন্য অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন,পল্লী বিদ্যুতের যে ঘটনা ঘটেছে আমরা কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি সুতরাং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া কোন সুযোগ নেই। আর ঈদের আগে যে বাবুর উপর আক্রমণ চালিয়েছিল সেও আমাদের থানাতে কোন অভিযোগ করে নাই। তবে জমি জমা সম্পর্কে আমাদের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছিল আমরা এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ গ্রহণ করি না তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এমন কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।