সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য সহপাঠী শিক্ষক,অভিভাবকদের নামে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ, ছবিসহ হুমকি দেওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের তদন্তে সত্যতা মিললেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফুসে উঠছে অভিভাবক এলাকাবাসী। ঘটনাটি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ৪৬ নং দক্ষিণ শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানার বিরুদ্ধে। তবে বিষয়টি নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে । সহকারী শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানা ২০১১ সালে বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরিতে যোগদান করে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার পাচানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম চাকুরী শুরু করেন। সেখানে ২ বছর চাকরি করে বদলি হয়ে গত ২৭/২/২০০১৩ সালে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করে । সেখানে চাকরি করা কালীন শিক্ষক, অভিভাবক ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহারের কারণে তাকে ৪৬ নং দক্ষিণ শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। এখানে এসে আবারো একই রূপ ধারণ করলে তাকে ছয় মাসের জন্য ডেপুটিশনে ভর্তি মহিলা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রীতি স্থাপন করা হয়। এখান থেকে ফিরে এসে নিজের কর্মস্থল দক্ষিণ শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্বের ন্যায় উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার কে এম মুস্তাফিজুর রহমান, প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান বাবলু, সহপাঠী শিক্ষক, শিক্ষিকা সহ বিভিন্ন অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার এবং বিভিন্ন জনের নামে অসামাজিক কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এবং অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাড়িয়ে দিলে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান বাবলু ঐ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে গত ৬/১০/২৪ তারিখে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৬/১১ /২০২৪ তারিখে স্বাক্ষরিত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী ৩৮.০১.৮৭০০.০০০.১৮.০১২.২০২৪.২১৫২ নং স্মারকে বিষয়টি তদন্তের জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গত ৪/১২/২০২৪ তারিখে উশিঅ/কালি/সাত/২৪/৮০৬/১(৩) নং স্মারকে স্কুলের অফিস কক্ষে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহাকে সঙ্গে নিয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে তদন্ত সম্পন্ন করে সত্যতা মেলায় গত ২৬/১২/২০২৪ তারিখে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গত ৩/ ২ /২০২৫ ইং তারিখে ৩৮.০১.৮৭০০.০০০.০৪.০০৪.২৩-২৫৪ নং স্মারকে শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী ৩(ব) উপবিধি অনুযায়ী অভিযুক্ত করে ৪(৩)(ড) উপবিধি অনুযায়ী কেন চাকরি হতে বরখাস্ত করা হবে না এই মর্মে বিভাগীয় মামলা অজু করার জন্য অভিযোগ নামা গঠন করে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শাইয়া জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন। বিভাগীয় মামলা রুজু করার পর বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ২০১৮ এর ৭(২)(ব) ধারা অনুযায়ী গত ১৯/৫/২৫ তারিখে ৩৮.০১.৮৭০০.০০০.০৪.০০৪.২৫-১০২৮ স্মারকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষক কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহকে নির্দেশ দেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে গত ২৮/০৫ /২০২৫ ইংরেজি তারিখে বেলা ১১ টার দিকে উক্ত বিদ্যালয়ে পুনরায় তদন্ত সম্পন্ন করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট ঞ্জ
বড়প্রতিবেদন দাখিল করেন। বর্তমান ঐ শিক্ষিকাকে দ্রুত বদলি অথবা চাকরি থেকে অপসারণ না করায় উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ,অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। তদন্তে সবকিছু প্রমাণ মেলায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় অভিভাবক, সুধীবৃন্দ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার রহস্যজনক ভূমিকার জন্য দায়ী করে দ্রুত অভিযুক্ত শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানার অপসারণের দাবি জানান। এ ব্যাপারে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানার নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান বিতর্কিত উপজেলার বহু আলোচিত প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান বাবলু পূর্বে ভদ্রখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, অসামাজিক কার্যকলাপ সহ অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগে এলাকাবাসী ঐ স্কুল থেকে তাকে বিতাড়িত করলে দক্ষিণ শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বদলি করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে এলাকাবাসী এবং অভিভাবক ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে অত্র স্কুলে যোগদানে বাধা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এ সময় আমি একমাত্র তাকে সাহায্য করি। যার প্রেক্ষিতে সে আমাকে বিভিন্ন সময়ে হয়রানি কুপ্রস্তাব সহ আমার বিবাহের সম্বন্ধ নষ্ট করতে থাকে। তার কথামতো কাজে রাজি না হলে আমার বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শ্রীকলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব জাফর উল্লাহ গত ২০/৭/২০২৪ তারিখে তৎকালীন সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, সুপারিশ কৃত একটি লিখিত অভিযোগ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা এবং উপজেলা শিক্ষার কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু উক্ত অভিযোগের কোন তদন্ত না করে গত ৫ আগস্টের পরে প্রধান শিক্ষক নিজের কুকর্ম ঢাকার জন্য আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে না জানিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে আমার বিরুদ্ধে মন গড়া তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের মাধ্যমে আমাকে হয়রানি করে আসছে। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষক কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমীর নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান বিষয়টি দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।