মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া একটি শত বছরের পুরোনো খাল আজ দখলদারিত্ব, ভরাট ও অবহেলার শিকার। একসময় যেই খাল ছিল কৃষি, মাছ, সেচ ও পরিবেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণরেখা, সেই খাল আজ যেন হারিয়ে যাওয়া শ্বাসের নামান্তর। স্থানীয়দের ভাষায়, “এটা এখন আর খাল নয়—একটা স্মৃতিচিহ্ন মাত্র।”
খালটির শুরু মহম্মদপুরের প্রাণকেন্দ্রে, যা মধুমতি নদী হয়ে ঘোপ বাওড় ও কাতলা সুর বিল পর্যন্ত বিস্তৃত। একসময় এই খাল দিয়ে বিস্তীর্ণ বিল ও জমিতে পানি প্রবাহিত হতো, যা কৃষকের চাষাবাদ ও মাছ উৎপাদনের মূল উৎস ছিল। আজ সেই খালের পানিপ্রবাহ দখল ও ভরাটের কারণে বাধাগ্রস্ত, কোথাও কোথাও তা প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ।
কৃষক বলছে—“চাষ করব কিভাবে?”
খাল সংকুচিত হওয়ায় সেচের পানির অভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়ায় একর একর জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। স্থানীয় কৃষক মতিউর রহমান বলেন:
“আগে খাল দিয়ে বিলের জমিতে পানি যেত, এখন পানি তো দূরের কথা—খালটাই খুঁজে পাওয়া যায় না।”
মৎস্যজীবীরা বলেন..
মাছও নেই, পরিবেশও বিপন্ন
এই খাল ছিল স্থানীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। স্রোতের সঙ্গে মাছ প্রবেশ করত নদী হয়ে ঘোপ বাওড়ে এবং সেখান থেকে বিল ও জলাশয়ে। বর্তমানে পানিপ্রবাহ না থাকায় মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। পাশাপাশি খালপাড়ের গাছপালা ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে।
জনমনে ক্ষোভ, ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়
খাল রক্ষার দাবিতে স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথা লিখছেন । কেউ লিখেছেন—
“প্রয়োজনীয় একটা খাল নিয়ে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই। আগে অনেকবার বলেছি, কেউ কান দেয়নি।”
আরেকজন বলেন—
“সুইসগেটের মাথাতেও দখল, এখন তদন্ত ছাড়া কোনো কিছুই বোঝা সম্ভব নয়।”
দখল হয়ে যাওয়া খালটির জন্য জলবদ্ধতা ও বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে
বর্ষাকালে এই খালের পানিপ্রবাহ না থাকায় এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাড়িঘর ও সড়ক। সামান্য বৃষ্টিতেই জমে যাচ্ছে পানি, ফসল যাচ্ছে নষ্ট হয়ে। সময়মতো খাল পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করা না হলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
✅ জনগণের ৫ দফা দাবি:
১. খাল জরিপ করে প্রকৃত অবস্থা নির্ধারণ
২. অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ
৩. সুইসগেট ও সংযোগস্থল পুনঃস্থাপন
৪. খালের খনন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুনঃনির্মাণ
৫. জনগণকে সম্পৃক্ত করে ‘খাল রক্ষা কমিটি’ গঠন
এখনই উদ্যোগ না নিলে হারিয়ে যাবে খালের নামটুকুও
এই খাল শুধুই একটি পানির পথ নয়, এটি মহম্মদপুরের কৃষি, প্রাণ-প্রকৃতি এবং জনগণের জীবনের অংশ। এখন যদি দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালটি পুনরুদ্ধার ও খনন করা না হয়, তাহলে আগামীতে এর মূল্য দিতে হবে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মাধ্যমে।
"খাল বাঁচান, মোহাম্মদপুর বাঁচবে!"