মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘তিন রাস্তার মোড়’ (ট্রাফিক মোড়) – এই স্থানটি বর্তমানে যানজটের এক ভয়াবহ দুর্দশার কারন হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ মোড়ে যানজট যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এতে সাধারণ জনগণ তো বটেই, জরুরী রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও দীর্ঘ সময় আটকে পড়ে জীবনের ঝুঁকিতে পড়ছে।
বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ছুটির সময়, হাটবাজার বসার দিন এবং সকাল-সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে যানবাহনের লাইন মোড় ছাড়িয়ে আশেপাশের সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ফুটপাত দখল, অব্যবস্থাপনায় দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল এবং মোড়ের মাঝের বিপদ জনক বিশালাকৃতির গাছ – এই তিনটি মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যানজটের পেছনে।
স্থানীয়দের অভিযোগ,
“আমরা প্রতিদিন এই ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। মাঝে মাঝে অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘ সময় আটকে পড়ে। জীবন বাঁচানোর বদলে রাস্তায় সময় চলে যায়।”
ট্রাফিক পুলিশের লোকবল সংকট, সুনির্দিষ্ট সিগন্যাল ব্যবস্থা না থাকা এবং অপরিকল্পিত পার্কিং – এসব মিলিয়ে সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। অথচ এই মোড়টিই উপজেলার বাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনিক দপ্তরের সংযোগস্থল।
জরুরী পণ্যবাহী ট্রাক ড্রাইভার এ বিষয়ে বলেন -
"আমরা পচনশীল কাঁচামাল নিয়ে যাওয়ার সময় এই ট্রাফিকমোড়ে আসলে জ্যামের কারণে আমাদের অনেক সময় ব্যয় হয় যার ফলে যথা সময়ে পন্য পৌঁছাতে পারি না "
সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমানের সময়কালীন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও, তার বদলির পর পরিস্থিতি আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে।
মহম্মদপুর বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মো: আখতারুজ্জামান বিল্লাহ্ তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
“দীর্ঘদিনের এ যানজট নিরসনের জন্য যা যা করা দরকার, তার সবটাই আমরা বণিক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে আমি করব।”
সমিতির আরেক নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী এ বিষয়ে জানান,
“আমি নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সব সময় বাজারের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করি। ট্রাফিক মোড়ের যানজট নিরসনের জন্য সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করব।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ আরও বলেন,
“এই মোড়ের মাঝের বড় গাছটি যদি সরানো হয় এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য একজন স্থায়ী সদস্য নিয়োগ করা হয়, তবে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হতে পারে। এছাড়া নির্দিষ্ট পার্কিং এলাকা নির্ধারণ এবং সড়ক প্রশস্তকরণ এখন সময়ের দাবি।”
ট্রাফিক মোড়ের পাশের ব্যবসায়ী প্রকাশ সাহা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাই এই যানজটের কারণে আমার দোকানের কেনাবেচা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
স্থানীয় অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বলেন মোড়ের মাঝে থাকা বড় গাছটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে কারণ রাস্তা মেরামতের সময় এ গাছের বিস্তর শেখর অনেকবার কেটে ফেলা হয়েছে, যার ফলে গাছটির মূল শেখর ব্যতীত মাটিতে আঁকড়ে থাকার মত অন্য কোন শেকড় নেই সামান্য বাতাস ঝড় ঝাপটাই যে কোন সময় গাছটি ভেঙে পড়তে পারে তাতে করে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে
বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনুর আক্তারের কাছে এ বিষয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
“বিষয়টি আমিও পর্যবেক্ষণ করেছি। যানজট নিরসনে আমার আন্তরিক কোন ঘাটতি নেই । তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে যেটা করলে ভালো হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
তিন রাস্তার মোড় কেবল একটি সড়কসংযোগ স্থান নয়, এটি মহম্মদপুরের অর্থনীতি, জনজীবন ও জরুরি সেবার কেন্দ্রবিন্দু। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই ছোট যানজট একদিন বড় দুর্যোগে রূপ নিতে পারে।