এক তরুণ কিশোরের সংগ্রামের গল্প
গভীর রাত। বাজারের অধিকাংশ দোকান তখন বন্ধ। তবে ট্রাফিক মোড়ের এক কোণায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকানে এখনো আলো জ্বলছে। সেখানে একজন কিশোর ব্যস্ত হাতে কেটলি নিয়ে চা ঢালছে। তার নাম আশিক। বয়স মাত্র ১৭। ক্লান্ত মুখে ফুটে উঠেছে শ্রমের চিহ্ন, তবে চোখে রয়েছে উজ্জ্বল স্বপ্নের ঝিলিক।
আশিক বর্তমানে মহম্মদপুরের আমিনুর রহমান কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। দিনের বেলায় সে কলেজে পড়ে, আর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে চায়ের দোকানে। পরিবারে নেই উপার্জনক্ষম কেউ—পিতা দীর্ঘদিন অসুস্থ, কর্মহীন। মা গৃহকর্মীর কাজ করলেও আয় তেমন কিছুই হয় না। সংসারের হাল ধরতে তাই আশিককে স্কুলের বইয়ের পাশাপাশি ধরতে হয়েছে চায়ের কেটলি।
“কলেজে যাই, তারপর সন্ধ্যায় দোকানে কাজ করি। আমি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৩২ পেয়েছি। এইচএসসিতেও ভালো রেজাল্ট করতে চাই। পড়াশোনা বন্ধ করতে চাই না,” বলে আশিক, লাজুক কণ্ঠে।
তার চোখে স্বপ্ন—একদিন বড় হয়ে একজন সরকারি কর্মকর্তা হবেন। আশিক বলেন, “যদি পড়তে পারি, তাহলে পরিবারকে ভালো রাখতে পারব। গরিবদের পাশে দাঁড়াতে পারব।”
তার শিক্ষকেরা জানান, আশিক একজন মেধাবী, বিনয়ী ও অনুগত ছাত্র। তার সহপাঠীরাও শ্রদ্ধা করে তার সংগ্রামী মানসিকতার জন্য। স্থানীয় ব্যবসায়ী শরিফ বলেন, “আশিক আমাদের সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা। গরিব ঘরের ছেলে হয়েও সে হাল ছাড়েনি। কেউ যদি ওর পাশে দাঁড়ায়, ও অনেক দূর যেতে পারবে।”
তবে আশিকের এই স্বপ্নযাত্রা সহজ নয়। প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট, পর্যাপ্ত বই না থাকা, ক্লান্তিতে পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে না পারা—এই সব প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে।
আশিকের মতো হাজারো কিশোর এই সমাজে স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে, সংগ্রাম করে। রাষ্ট্র, সমাজ ও আমাদের সবার দায়িত্ব—এই স্বপ্নগুলোকে আগলে রাখা। কারণ, এই খেটে খাওয়া ছাত্ররাই একদিন হয়ে উঠবে দেশের প্রকৃত সম্পদ।