আজ শনিবার (৪ মে ২০২৪) দুপুরে খিলগাঁও থানায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ মামলা সম্পর্কে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বিপিএম, পিপিএম।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকায় তোশকে মোড়ানো মৃতদেহের পরিচয় উদঘাটনসহ ৩৬ ঘন্টার মধ্যেই হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির খিলগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ওই হত্যাকারী হলেন ভিকটিমের আপন চাচাতো ভাই মোঃ মনির হোসেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল অনুমান সাড়ে সাতটায় ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে সিপাহীবাগ আইসক্রিম ফ্যাক্টরীর গলির প্রশান্তি মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রের বিপরীত পাশের গলিতে তোষকে মোড়ানো অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে খিলগাঁও থানা পুলিশ। স্থানীয় লোকজন এবং মৃত ব্যক্তির স্ত্রী শারমিন আক্তার লাশটি হাবিবুর রহমান রুবেলের বলে শনাক্ত করে। প্রাথমিকভাবে লাশের মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখে এটি একটি হত্যাকান্ড বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। এই সংক্রান্তে ভিকটিমের মা মিনু বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই দিন খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।
তিনি বলেন, মৃতদেহ প্রাপ্তির পর হতেই খিলগাঁও থানা পুলিশ মামলাটির রহস্য উদ্ঘাটন এবং হত্যাকারীকে শনাক্ত ও গ্রেফতারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত মোঃ মনির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। মাত্র ৩৬ ঘন্টার মধ্যে খিলগাঁও থানা পুলিশ ক্লুলেস এ মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারে সফল হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য ও হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যেখানে মৃতদেহ পাওয়া যায়, তার পাশেই মনির হেয়ার স্টাইল নামক একটি সেলুনের দোকান আছে। ভিকটিম রুবেল মনিরের চাচাতো ভাই। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেখানে জমিজমা ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলমান ছিল। রুবেল নেশা করতো, অন্যকোন পেশা ছিলো না। তার নামে মাদকসহ চারটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় দুই মাস পূর্বে রুবেল হুমকী দিয়ে মনিরের কাছে টাকা দাবী করে এবং ১৫ দিন সেলুন বন্ধ রাখতে বাধ্য করে। পরবর্তী সময়ে রুবেল ১২ হাজার টাকা নিয়ে সেলুন খুলতে দেয়। এ ঘটনা ও জমিজমার পূর্ব বিরোধের জেরে মনির রুবেলের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। সে রুবেলকে শায়েস্তা করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। গত বুধবার (১ মে) রাত অনুমান এগারটার দিকে ভিকটিম রুবেল মনিরের দোকানে চুল কাটার জন্য আসে। রুবেল তখন সকল কর্মচারীকে ছেড়ে দিয়ে ভিকটিম রুবেলের চুল কাটতে শুরু করে। চুল কাটার ফাঁকে সুযোগ বুঝে মনির ভিকটিম রুবেলকে ঘাড়ে বৈদ্যুতিক তারের শক দেয়। রুবেল অচেতন হয়ে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সেলুনে থাকা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় একের পর এক আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে
উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, মৃত্যু নিশ্চিত করে সে দোকানের শাটার বন্ধ করে দিয়ে মেরাদিয়া থেকে ৬৫০ টাকা দিয়ে একটি তোশক ও দড়ি কিনে নিয়ে আসে। এরপর তার দোকানে থাকা একটি বস্তায় রুবেলকে ভরে তোশকে পেঁচিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর সে একটি ভ্যান খুঁজতে থাকে, ভ্যান না পেয়ে সে একটি অটোরিকশা নিয়ে আসে। অটোরিকশা চালক বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কৌশলে পালিয়ে যায়। তখন সে একাই মৃতদেহটি কিছুদুর টেনে ফেলে যায়।
মনিরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত সেলুন হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তার, হাতুড়ি ও ভিকটিম রুবেলের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি, উদ্ধারকৃত আলামত, তোশক বিক্রেতার স্বীকারোক্তি ও আশপাশে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় গ্রেফতারকৃত মনিরই এই হত্যাকান্ডে জড়িত বলে যোগ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।