আজ রবিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম-বার।
রাজধানীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির অতিউগ্র অংশ নব্য জেএমবির সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শীর্ষ নেতাসহ দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ ইউসুফ ওরফে ইউসুফ হুজুর ও মোঃ জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে নব্য জেএমবির আদর্শ প্রচারপত্র ‘নাবা’ পত্রিকা, ২টি মোবাইল ফোন, ১টি ব্যাকপ্যাকে রক্ষিত অবস্থায় ১০টি ডেটোনেটর ও ৩টি জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, চলতি বছর অক্টোবর থেকে ২৮ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সিটিটিসি নব্য জেএমবির ছয়জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা হলো মোঃ ইউসুফ ওরফে ইউসুফ হুজুর এবং অপারেশনাল কমান্ডার আবু বকর। এরপর ইউসুফ হুজুর ও আবু বকরকে গ্রেফতার করার জন্য সিটিটিসি গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এর আগে ২০১৭ সালে ইউসুফ ও আবু বকরকে গ্রেফতার করেছিল সিটিটিসি। ২০১৯ সালে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে মধ্য প্রাচ্যে আত্মগোপনে চলে যায়। সেখানে থাকাকালীন ইউসুফ ও আবু বকর বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফরম ব্যবহার করে নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। সাড়ে তিন বছর পর ২০২২ সালে ঈদুল আজহার পর তারা দেশে ফিরে পুনরায় নতুনভাবে নব্য জেএমবির সদস্যদের সংগঠিত করার চেষ্টা করে। গত ৩ নভেম্বর আবু বকরকে সিটিটিসি গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আবু বকর জানায় যে, মেহেদী হাসান ওরফে জন তুরস্কে গ্রেফতার হতে পারে এমন সন্দেহে ইউসুফ হুজুর ও আবু বকর বাংলাদেশে চলে আসে। ইউসুফ হুজুর বাংলাদেশের সংগঠনের প্রধান ও আবু বকর অপারেশনাল কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হয়। গ্রেফতারকৃত আবু বকরের মোবাইল ফোন অনুসন্ধান করে গত দুর্গাপূজায় পূজামণ্ডপে তাদের হামলার পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বিভিন্ন পূজামণ্ডপ রেকি করে এবং বোমা তৈরীর সরঞ্জাম সংগ্রহ করে। কিন্তু ক্রমাগত গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত থাকার কারণে তাদের পরিকল্পনা সফল হয়নি।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত আবু বকরের দেয়া তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী ডেমরা এলাকায় ইউসুফ ও তার অপর সহযোগী জহির এবং অন্যান্য সদস্যদের গোপন বৈঠকের খবর পাওয়া যায় । সেখানে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার শীর্ষ নেতা ইউসুফ ও তার সহযোগী জহিরকে গ্রেফতার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃতদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে আরবিতে লেখা পিডিএফ ফাইল পাওয়া যায়, যার শিরোনাম ছিল ইসলামী স্টেট এবং সমসাময়িক খিলাফত। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত ইউসুফ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক দাওয়াতের কাজ করত ও স্কুল কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্রদের নব্য জেএমবির কাঠামো ও আকিদা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করত।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ২০১৯ সালের পূর্বে ইউসুফ হুজুর মাদ্রাসায় শিক্ষকতার কাজ করত। সেখানে তার সহপাঠি জহির ও আব্দুল্লাহর সাথে ব্যবসার উদ্যোগ নেয়। ২০২২ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে মিনতীন নামে কন্সট্রাকশন কোম্পানির কাজ শুরু করে। মূলত ব্যবসার অন্তরালে তারা সংগঠনের কাজে নিয়োজিত ছিল এবং ব্যবসা হতে প্রাপ্ত অর্থ সংগঠন পরিচালনায় ব্যয় করত।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, তারা নিষিদ্ধ সংগঠন নব্য জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিজরত করার পরিকল্পনা করে। তারা নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে হামলার চেষ্টা, সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র এবং নব্য জেএমবির তথ্য প্রচার করার জন্য ডেমরা থানা এলাকায় একত্রিত হয়েছিল।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।