স্টাফ রিপোর্টার :
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কমিশনার মাসুমা খাতুনের সাবেক স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদের রাগ-ক্ষোভ ছিল মাসুমার ওপর। সেই ক্ষোভ থেকেই মাসুমা খাতুনকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন হারুন। ওই ঘটনায় ড্রাইভার মাসুদসহ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, অপহরণের জন্য হাতিরঝিলে ৫০ হাজার টাকায় একটি বাসা ঠিক করা হয়। কৌশলে নেওয়া হয় ভুক্তভোগী মাসুমার সাবেক ড্রাইভার মাসুদকে। ড্রাইভারের নেতৃত্বে অপহরণ মিশনে অংশ নেয় সাতজন। গত ১৭ আগস্ট অপহরণের রাতে তাকে ওই বাসায় নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকার একটি গ্যারেজে নেওয়া হয় এবং সে সময় গাড়িতেই করা হয় মারধর। শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, শুক্রবার ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন-মো. মাসুম ওরফে মাসুদ (৪২), আবদুল জলিল ওরফে পনু (৪৮) ও হাফিজ ওরফে শাহনি (৪৮)। এ নিয়ে ওই মামলার ছয় আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। আরও তিন আসামি হলেন-সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত। ওই নারী কর্মকর্তাকে অপহরণে জড়িত পাঁচজনই চালক মাসুদের ঘনিষ্ঠ।
তিনি আরও বলেন, মাসুদসহ গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা গেছে নারী কর্মকর্তাকে অপহরণের পরিকল্পনায় ছিলেন তার সাবেক স্বামী হারুন অর রশিদ। গত ১ আগস্ট চাকরিচ্যুত করার পর চালক মাসুদ ওই নারী কর্মকর্তার ওপর ক্ষুব্ধ হন। পরে তিনি ওই নারী কর্মকর্তার সাবেক স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন আগের স্বামী মাসুদকে ৭০ হাজার টাকা দেন। পরে মাসুদ তার পাঁচ সহযোগীর মধ্যে ওই টাকা ভাগ করে দেন। নারী কর কর্মকর্তার বর্তমান চালকের সঙ্গে অপহরণকারী দলের সদস্য হাফিজের সুসম্পর্ক ছিল। বর্তমান চালকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই নারীর অবস্থান জেনে নেন অপহরণকারীরা।
আগের স্বামীর পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে ওই নারী কর্মকর্তা মগবাজার থেকে বেইলি রোডে পৌঁছালে অপহরণকারীরা একটি মোটরসাইকেল ও রিকশা দিয়ে তার গাড়ির গতি রোধ করেন। তখন গাড়ির চালক নিচে নামলে তাকে মারধর করে গাড়ির চালকের আসনে বসেন আসামি মাসুদ। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী গাড়ি নিয়ে তারা হাতিরঝিলের একটি বাসায় আসেন। তবে বাসার দরজার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় তারা গাড়ি নিয়ে ঢাকায় ঘুরতে থাকেন। পরে কাঁচপুরে মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে ওই নারীকে বেধড়ক পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়। ওই নারীর কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। নগদ দেড় লাখ টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন আসামিরা। পরদিন তাকে মাদারটেকের একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, মাদারটেকের বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর মাসুদ আবার ওই নারীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে মাসুদসহ অন্যদের ওই নারী কর্মকর্তাকে হাতিরঝিলের বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে নেমে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যান। আর গাড়ির পাহারায় ছিলেন সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত। সুযোগ বুঝে ওই নারী কর্মকর্তা ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে তাকে উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট রমনা থানায় মামলা করেন ওই কর্মকর্তা।
নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনে সরাসরি জড়িত চালক মাসুদ গাড়ি চুরিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বাস চালানোর সময় দুর্ঘটনায় কয়েকজন নিহত হন, সেই মামলার তিনি আসামি বলেও জানায় র্যাব।